বিভিন্ন পদ্ধতির ইনজেকশন
* সাবকিউটেনিয়াস (S/C) ইনজেকশন
* ইন্ট্রামাসকুলার (I/M) ইনজেকশন
*ইন্ট্রাভেনাস (I/v) ইনজেকশন
* ইন্ট্রাডার্মাল (I/D) ইনজেকশন
* ইন্টাআর্টিকুলার (I/A) ইনজেকশন।
ইনজেকশন দিবার নিয়ম -
১। প্রথমে সিরিঞ্জ, পিস্টন ও সূঁচ গরম পানিতে ধুইয়া মুছিয়া লইতে হয়।
২। অতঃপর মেথিলেটড স্পিরিট দিয়া সিরিঞ্জের সব কিছুকে জীবাণু মুক্ত করিতে হয় ।
উক্ত সিরিঞ্জটিকে একবার সামনে ও একবার পিছনে চালিয়া পিষ্টনের সাহায্যে সিরিজ ও সূঁচ পরিষ্কার করিতে হয়। পেনিসিলিন জাতীয় এন্টিবাইওটিকের ক্ষেত্রে স্পিরিট ব্যবহার করা যায় না।
৩। পিষ্টনটি সিরিঞ্জ হইতে বাহির করিয়া বাতাসে শুকাইয়া লইতে হয়। সেই সময় সিরিঞ্জ ও পিষ্টনটি হাতে থাকিবে, কোন কিছুতেই স্পর্শ করানাে চলিবে না।
৪। এখন পিস্টনটি সিরিঞ্জে ঢুকাইয়া ঔষধের এ্যাম্পুল ভাঙ্গিয়া, উহার মধ্যে সূঁচ ঢুকাইয়া ধীরে ধীরে পিস্টনটি পিছনের দিকে টানিয়া ঔষধ ভরাইতে হয়।
৫। ঔষধ ভরান হইলে যে স্থানে ইনজেকশন দিতে হইবে, সেই স্থানটি স্পিরিটের সাহায্যে অর্থাৎ স্পিরিটে ভেজানাে তুলায় ঘসিয়া জীবাণু মুক্ত করিতে হইবে।
৬। এখন সিরিঞ্জের সুঁচ ঢুকাইয়া পুশ (Push) করিতে হইবে।
৭। ঔষধ পুশ করা শেষ হইলে সূঁচ টানিয়া বাহির করিতে হইবে এবং উক্ত স্থানে টিংচার বেনজিন বা স্পিরিটে তুলা ভিজাইয়া চাপিয়া রাখিতে হইবে।
৮। অতঃপর সিরিঞ্জকে গরম পানিতে পরিষ্কার করিয়া রাখা ভাল।
এখানে বিভিন্ন প্রকার ইনজেকশন সম্পর্কে আলােচনা করা হইল।
*সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন (S/C]।
এই ইনজেকশন মাংসের মধ্যে নয়, চামড়ার ঠিক নীচে, পেশীর উপরে দিতে হয়। চামড়া পুরু হইলে সাবকিউটেনিয়াস ইনজেকশন দিবার সময় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও তজ্জনীর সাহায্যে চামড়া টানিয়া চামড়ার মধ্যে সমান্তরালভাবে উঁচ ঢুকাইতে হইবে যেন বেশী ভিতরে সুই প্রবেশ না করে। সাধারণতঃ শরীরের যে সকল জায়গায় চামড়া নরম থাকে, সেই সকল জায়গায় এই ইনজেকশন দিতে হয়।
অতঃপর ধীরে ধীরে ঔষধ পুশ করিবে এবং ২/১ ফোটা ঔষধ থাকিতেই সূঁচ বাহির করিবে যাহাতে কোন বুদ বুদ শরীরে প্রবেশ না করে। তখন ইনজেকশনের স্থান ঘসিয়া ঔষধ ভিতরে ছড়াইয়া দিতে হইবে এবং উক্তস্থানে টিংচার বেনজিন দিয়া জীবাণু মুক্ত করিতে হইবে।
(সুচ ঢুকাইয়া দেখিতে হইবে যে, কোন শিরায় ফুড়িয়াছে কি-না। শিরায় ফুড়িলে সিরিজে রক্ত আসিবে। তখন ইনজেকশন না দিয়া সুঁচ টানিয়া যাহির করিতে হইবে।)
*ইনটামাসকুলার ইনজেকশন (I/M)
পেশীর মধ্যে যে ইনজেকশন দেয়া হয় তাহাকে ইনট্রামাসকুলার ইনজেকশন বলে।
বাহুর ডেল্টয়েড পেশীতে বা পাছায় গ্লুটিয়াস পেশীতে এইগুলি দিতে হয়। এই ইনজেকশন প্রথমে চামড়া ভেদ করিয়া, তারপর পেশীর মধ্যে প্রবেশ করে। সাবকিউটেনিয়াসের থেকে বেশী গভীরে সূঁচ ঢুকাইতে হইবে। সাধারণতঃ বাহুর উপরের পেশীতে বা কোমরের নীচের পেশীতে এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। কোমরের নীচের পেশীতে ইনজেকশন লইলে ব্যথা একটু কম হয় এবং বাহুর পেশীতে দিলে ব্যথা বেশী হয়।
পূর্বের নিয়মে সিরিঞ্জে ঔষধ ভরিতে হয়। অতঃপর জীবাণু মুক্ত তুলা এ্যালকোহল বা স্পিরিটে ভিজাইয়া ইনজেকশনের স্থান পরিষ্কার করিতে হইবে। লক্ষ্য রাখিতে হইবে যে, সিরিঞ্জে যেন কোন প্রকার বাতাসের বুদ বুদ না থাকে। বুদ বুদ থাকিলে সিরিঞ্জের সুঁচটি উপরের দিকে উঠাইয়া সব বুদ বুদ বাহির করিয়া দিতে হইবে।
সুই প্রবেশ করানাের সময় দেখিতে হইবে, তাহা যেন কোন শিরা বা ধমনীতে প্রবেশ না করে। সুচ ফুটানাে হইলে পিস্টনটি খুব ধীরে টানিয়া দেখিতে হইবে যে, কোন রক্ত সিরিজে প্রবেশ করিতেছে কি-না। রক্ত প্রবেশ করিলে ঐ স্থানে ইনজেকশন না করিয়া অন্যস্থানে পূর্বোক্ত নিয়মে ইনজেকশন করিতে হইবে।
সিরিঞ্জো রক্ত প্রবেশ না করিলে ডান হাতের সাহায্যে পিষ্টনটি ধীরে ধীরে Push
করিতে হইবে। ২/১ ফোটা ঔষধ সিরিঞ্জে থাকিতেই সূচ বাহির করিয়া জীবাণু মুক্ত তুলা দিয়া ডান হাতে ধীরে ধীরে ঘষিয়া দিতে হইবে। সর্বশেষে আয়ােডিন বা টিংচার বেনজিন দিয়া তাহা ঘষিয়া দিলে ভাল হয়।
*ইনট্রাভেনাস ইনজেকশন (IV)
ইনট্রাভেনাস ইনজেকশন দিবার পদ্ধতি ভালভাবে আয়ত্ব না করিয়া কখনও ইনজেকশন দেয়া উচিত নয়। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকিয়া এই ইনজেকশন দেওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা করিবার পর ইনজেকশন দেয়া অভ্যাস করিতে হইবে। পূর্বোক্ত নিয়মে ইনজেকশনের যন্ত্র পরিষ্কার করতে ও ঔষধ ভরিতে হইবে।
মনে রাখিতে হইবে, সিরিঞ্জে যেন একটিও বুদ বুদ না থাকে।
দেহের শিরার মধ্যে এই ইনজেকশন দিতে হয় এবং ঔষধ সঙ্গে সঙ্গে রক্তে মিশিয়া যায় ।সিরিঞ্জে বুদ বুদ থাকিলে উহা রক্তে প্রবেশ করিবে এবং রক্ত জমাট বাঁধিয়া রোগীর প্রাণাশঙ্কা দেখা দিতে পারে।কনুইয়ের সামনে গিরায় এই ইনজেকশন দেওয়া হয়। সিরিঞ্জে ঔষধ ভরিয়া দেখিতে হইবে কোথায় ভাল শিরা আছে । কনুইয়ের উপরে রবারের ফাঁপা নল দিয়া চাপিয়া বাঁধিলে এই শিরা স্পষ্ট দেখা যায়। অতঃপর সিরিঞ্জের ঔষধ বুদ বুদ মুক্ত আছে কি-না আর একবার দেখিয়া লইয়া সূঁচটি নীচের দিক করিয়া সিরিঞ্জটি ধরিয়া রাখিতে হইবে। এখন সমান্তরাল করিয়া সঁচটা শিরায় ঢুকাইতে হইবে। শিরার শুধুমাত্র একটি দেওয়াল ভেদ করিবে-অন্যটি নয় । সিরিঞ্জের পিষ্টনটি পিছনের দিকে টানিলে ধীরে ধীরে রক্ত আসিবে, তখন ঔষধ সামনের দিকে Push করিতে হইবে। যদি পিছনের দিকে পিষ্টনটি টানিবার কালে রক্ত না আসে তখন সুচ বাহির করিয়া লইতে হয়।
*ইন্ট্রাডামলি (I/D)
ইহা চামড়ার মধ্যখানে দেওয়া হয়। যেমনঃ বি.সি.জি (যক্ষ্মার প্রতিষেধক)।
*ইট্রাআর্টিকুলার (I/A)
ইহা দুই হাড়ের মধ্যখানে দেওয়া হয়। বাত জনিত প্রদাহের জন্য এবং জরুরী অবস্থায় দেওয়া হয়। যেমনঃ Inj: Depomedrol প্রয়ােজনে অর্থপেডিক সার্জনের নিকটে ইনজেকশন দিতে হইবে। এই ইনজেকশন দিতে One time Disposable Syringe ব্যবহার করা ভাল । বিশেষজ্ঞ ব্যতীত এই ইনজেকশন করা বিপদজনক।
1 Comments
অনেক কিছু জানলাম, ধন্যবাদ।
ReplyDelete