ডেঙ্গু জ্বর (Dengue Fever)
ডেঙ্গু ভাইরাস এডিস নামক মশার দ্বারা হইয়া থাকে। পৃথিবীর সকল দেশেই এই রোগ হয়। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ইহা বেশী হয়।
ডেঙ্গু রোগটি ভাইরাসজনিত। সাধারণত, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকে।এক ধরনের মশা এই রোগের বাহক বলিয়া মনে করা হয়। একবার এই রোগ হইলে ৯-১২ মাসের মধ্যে আর হইতে দেখা যায় না। যে কোন বাড়ীতে যে কোন অবস্থায় এই রোগ হইতে পারে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে যমুনা নদীর পূর্বাংশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল ।
কখন হাসপাতালে যেতে হয়
ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন—নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে—‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট।
বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।
‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।
হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তপাত হয়, রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমা কমে যায়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
১। ডেঙ্গু জ্বরের উপ্তিকাল ৫-৭ দিন। প্রথমে ২/৩ দিন প্রবল জ্বর হয়, কয়েকদিন তাপ কম হয়। তারপর
২। সারা অঙ্গে গ্রন্থিসমূহে প্রবল ব্যথা হয় ।
৩। শরীরে শীত শীত অনুভব করে এবং কম্প দিয়া জ্বর আসে। তীব্র মাথা ব্যথা হয়।
৪ । বমি বমি ভাব হয় কিম্বা বমি হয়।
৫। শরীরে ও কোমরে তীব্র ব্যথা এই রোগের বিশেষ একটি লক্ষণ ।
১৬। জ্বরের তাপ ১০২° ডিগ্রীর উপর হয়।
৭। দ্বিতীয় বার জ্বরের সময় রোগীর হাত, পা ও বুকে এক ধরনের র্যাশ বাহির হয়।
৮ । গলায় গ্রন্থি ফুলিয়া যাইতে পারে ।
৯।ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ শরীরে ব্যথা। সঙ্গে মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা হতে পারে। সঙ্গে চামড়ায় লালচে দাগ বা র্যাশ থাকতে পারে।
১০।শরীর ঠান্ডা হচ্ছে মনে হতে পারে। ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীর ম্যাজম্যাজ করার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
১১।সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্তবমি, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য কঠিন বা দ্রুত হওয়া, শরীর ঠান্ডা অনুভব বা ঘাম হওয়া, দ্রুত নাড়ি স্পন্দন এবং ঘুম ঘুম ভাব, চেতনা হারানো।
১২।ডেঙ্গুর শক সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাল্স রেট অনেকটা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। রোগী অস্থির হয়ে ওঠেন। তখন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।
১৩। আরোগ্য লাভ করিবার পর রোগীর খুব দুর্বলতা থাকে ।
১৪। লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হয়।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
১.ডেঙ্গু হলে ওষুধ হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অনেকে না জেনে শরীরের বিভিন্ন অংশের তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বিপদ ঘটতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা। কারণ, ব্যথানাশক ওষুধ শরীরে রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে, যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
২.ডেঙ্গু হলে চিকিৎসকরা বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। যেমন- ভাতের মাড়, স্যালাইন, ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের রস, লেবুর পানি ইত্যাদি। তরল খাবার ৯০ শতাংশ কমায় ডেঙ্গুর তীব্রতা।
৩. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।
৪.ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। তাই প্লাটিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন- সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ।
৫.পেয়ারার শরবত পান করা যেতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পানীয়টি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ডেঙ্গু সংক্রমণ উপশম করবে।
৬.রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস ভালো কাজ করে। এটি শ্বেত রক্তকনিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। নিম পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণও আছে।
৭.ব্যথা বা জ্বরের জন্য Paracetamol (প্যারাসিটামল) যুক্ত ঔষধ।
মাত্রা: ভরা পেটে ১ বড়ি করিয়া দিনে ৩ বার বা প্রয়োজন অনুযায়ী।
বাচ্চাদের জন্য :ওজন অনুযায়ী মাত্রা: ১/২ চামচ করিয়া দিনে ৩ বার।
৮. রোগী খুব বেশী দুর্বল হইলে Dextrose পানিতে মিশাইয়া দিনে ২/৩ বার যাইবে ।
৯.সবকিছু অন্যান্য জ্বরের মত সেব্য।
১০. পেটের গণ্ডগোল না থাকিলে Horlicks খাইবে।
১১. প্রথমে রক্তের Complete Picture করে নিবার উপদেশ দিতে হবে।
১২.মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বর হইলে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য সুপারিশ করা উচিত।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ ও সতর্কতা
যেহেতু এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ঘরে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করুন। ঘরের আনাচে-কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় মশার ওষুধ বা স্প্রে দিতে পারেন। সুরক্ষিত থাকতে দিনে যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পরাই ভালো।
এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। এ কারণে অফিস, ঘর এবং এর আশেপাশে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও পানি জমা থাকলে ২-৩ দিন পর পর তা পরিবর্তন করুন। অনেক সময় ফুলের টবে, এসি বা ফ্রিজের নিচের মতো স্থানে পানি জমে থাকে, ডেঙ্গুর মৌসুমে এসব স্থান পরিষ্কার রাখুন।
ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কিছু বিপদ সংকেত জানা থাকলে সতর্ক হতে সুবিধা হবে। অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, তীব্র পেটে ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, শ্বাসকষ্ট, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, রক্তবমি হলে- দেরি না করে, সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে
ডেঙ্গুতে সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন ১ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের উপরে যাদের বয়স। এছাড়া গর্ভবতী নারী, যাদের ওজন বেশি, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, যারা হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত কিংবা যাদের নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাদেরকে ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
এছাড়া ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকতে এ সময়ে জ্বরে আক্রান্ত হলেই প্রথমে একজন অভিজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আসসালামু আলাইকুম,আমাদের অনলাইন Shop www.mimshopbd.com এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার পছন্দের পোডাক্ট অর্ডার করুন,আমরা ক্যাশঅন ডেলিভারিতে পোডাক্ট দিয়ে থাকি।পোডাক্ট হাতে পেয়ে বিল পরিশোধ করতে পারেন। বিস্তারিত জানতে what’sup 01706462833
mobile app:
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.bponi.site_mimshopbd&pli=1
উপরের buy now click;করলে সাইট পেয়ে যাবেন
0 Comments