ভিটামিন ই কি?
ভিটামিন ই হলো এক ধরণের অত্যাবশকীয় ভিটামিন যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি চর্বিতে মিশে যেতে পারে। নানা রকমের খাবারে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। এসব খাবারের ভিতরে রয়েছে ভোজ্য তেল, মাছ-মাংস, ডিম এবং নানা রকমের ফল-মুল।
এটি আমাদের শরীরে তৈরিকৃত ফ্রি-রেডিক্যাল থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সকল ফ্রি-রেডিক্যাল তৈরিতেও বাধা প্রদান করে। এই সকল ফ্রি রেডিক্যাল আমাদের আর্টারিগুলোতে ক্লগ বা বাধা তৈরির অন্যতম কারন। একই সাথে এগুলো আমাদের ত্বক, দৃষ্টিশক্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। ভিটামিন ই এই ক্ষতিগুলো থেকে আমাদের রক্ষা করে।
ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে সমস্যা হচ্ছে
চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ই’ থাকলে চুল ও ত্বক ভালো থাকে। ভিটামিন ‘ই’ ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। ‘ই’-এর অভাবে চুল পড়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়।
পেশির দুর্বলতা
অনেক গবেষণায় বলা হয়, ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে মায়োপ্যাথি হয়। মূলত শরীরে পেশির আঁশের দুর্বলতা হলে এ সমস্যা হয়। এ কারণে শরীর দুর্বল লাগতে পারে। তাই রোজকার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ই’ রাখা জরুরি।
ভারসাম্যহীনতা
ভিটামিন ‘ই’-এর ঘাটতি হলে শরীরে ভারসাম্যহীন বোধ হয়। মূলত ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে স্নায়ুগুলোতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে যায়। এ কারণে এ সমস্যা হয়।
ঝাপসা দেখা
আপনি যদি প্রায়ই ঝাপসা দেখেন, বিশেষ করে রাতে, তবে ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে এমনটা হতে পারে। ভিটামিন ‘ই’-এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান চোখের রেটিনাকে সুরক্ষা দেয়। এর অভাবে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়। এ ছাড়া এই ভিটামিনের অভাবে শরীরে হালকা রক্তশূন্যতা হতে পারে।
ভিটামিন ই আমাদের শরীরের নানারকমের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ সচল রাখতে সাহায্য করে৷ একই সাথে এটি একপ্রকারের
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ড: কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে শরীরে চাই অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা মেলে ভিটামিন-ই থেকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের জন্য ক্ষতিকারক মুক্তমৌলের সঙ্গে লড়াই করে। দূষণ এবং ধূপমান থেকে শরীরে মুক্তমৌল তৈরি হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন-ই’তে ভরপুর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ‘ইমিউন সেল’ বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরি সহায়ক, যা শরীরে তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া-নাষক অ্যান্টিবডি।
ক্ষত সারাতে: বাজারে ভিটামিন-ই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে এর রয়েছে নানান উপকারীতা। এরমধ্যে একটি হল কাটাছেড়ার ক্ষত ও ব্রণ সারানো।
বয়সের ছাপ দূর করা: কোষ পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন-ই উপকারী হওয়ায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।
অকালে পাকা চুল: চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুপ পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা বা ধুসর হওয়া থেকে বাঁচতে চাই ভিটামিন-ই।
ভিটামিন ই এর উৎসঃ
আমাদের প্রতিদিনের নানা রকম খাবারই আমাদের ভিটামিন ই এর সবচেয়ে বড় উৎস। যেমনঃ বিভিন্ন রকম ভোজ্যতেল। এর ভিতরে রয়েছে সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, বাদাম তেল। ফল এর মাঝে আমলকী, আম, এভোকাডো, বিভিন্ন রকমের বাদাম ইত্যাদি ফলে অত্যাধিক পরিমানে Vitamin E আছে। সবজির ভিতরে কুমড়ো, পালং শাক, বিট ইত্যাদি উৎস হিসেবে বিবেচ্য। এছাড়া বিভিন্ন শারিরীক সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন ই ট্যাবলেট অথবা সাপ্লিমেন্ট নেওয়া হয়ে থাকে।
Vitamin E ঘাটতি বুঝার উপায়
আগেই বলা হয়েছে Vitamin E চর্বিতে মিশতে পারে৷ এবং আমাদের শরীরে গ্রহণের এটিই একটি উপায়। যাদের শরীর চর্বি শোষণ করতে পারে না দেখা যায় তারা এই ভিটামিন ও শরীরে নিতে পারে না। আবার জিনগত সমস্যার কারনেও এই ধরনের সমস্যা দেখা যায়৷ এর কিছু লক্ষণ আছেঃ
রেটিনোপ্যাথি বা চোখের রেটিনায় সংক্রমন।
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি অর্থাৎ পেরিফেরাল বা সহায়ক নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষয়। যার ফলে হাত ও পায়ের পেশিতে ব্যাথা অনুভুত হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
এটাক্সিয়া বা চলাফেরা, নড়াচড়ায় নিয়ন্ত্রন না থাকা।
এর অতিরিক্ত ব্যবহারে সতর্কতা
প্রতিটা ভালো জিনিসেরই খারাপ দিকও আছে। অতিরিক্ত কিছুই ভালো না। ত্বকের সাথে সম্পর্কিত বিধায় সৌন্দর্য চর্চায় আমরা অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে Vitamin E supplement নিয়ে থাকি। এটি আমাদের প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুকির দিকে নিয়ে যেতে পারে৷ এছাড়া অতিরিক্ত সেবন থেকে ডাইরিয়া, বমি ও বমিভাব, ইন্টেস্টাইনাল ক্র্যাম্প, ফ্যাটিগ, দৃষ্টিভ্রম, মাথাব্যাথা, র্যাশ এমনকি প্রস্রাবে ক্রিয়েটিনিনের পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারে যা কিডনির অসুখে ধাবিত করতে পারে। তাই যেহেতু আমরা প্রকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত এই ভিটামিন পাচ্ছিই সেহেতু আমাদের সাপ্লিমেন্টের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত৷
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
১ গ্রাম অপেক্ষা বেশি সেবনের ফলে ভিটামিন ই এর বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
যেমনঃ
উচ্চ রক্তচাপ
ক্লান্তি বোধ
ডায়রিয়া
মায়োপ্যাথি
পেপটিক আলসার বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা
অতিরিক্ত চর্বি
চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত কত পরিমাণে ভিটামিন ই প্রয়োজন, বয়স অনুযায়ী সেই মাত্রা আলাদা। ৬ মাস পর্যন্ত রোজ ৪ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই নিলেই চলে। ৭ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত রোজ ৫ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন। এক থেকে তিন বছর বয়স পর্যন্ত রোজ ৬ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই দরকার। চার থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত সাত মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন। ৯ থেকে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত রোজ ১১ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই দরকার। ১৪ বছরের ঊর্ধ্বে ১৫ মিলিগ্রাম থেকে ১৯ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই দরকার।
0 Comments