Hot Posts

6/recent/ticker-posts

ভিটামিন ’এ’ এর কাজ ।ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে কোন রোগ হয়?vitamin A deficiency.

 

ভিটামিন ’এ’ এর কাজ ।ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে কোন রোগ হয়?





যে জৈব খাদ্য উপাদান সাধারণ খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে,তাকে ভিটামিন বলে। দেহে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণের অভাবে বিভিন্ন রোগ বা সমস্যার প্রাদুর্ভাব হয়। 


সুস্থ্য থাকার জন্য আমাদের শরীরে ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। অনেক প্রকারের ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ অন্যতম।

ভিটামিন ‘এ’ হল খাবারের মধ্যে থাকা জৈব অনু। ভিটামিন ‘এ’ র রাসায়নিক নাম ‘রেটিনাল’। মানবদেহে ভিটামিন ‘এ’ জারিত হয়ে রেটিনোয়িক অ্যাসিড তৈরি করে। ভিটামিন ‘এ’ খাদ্যের একটি খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান  ।


ভিটামিন ‘এ’ র পরিমান


শরীরে ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন অনুযায়ী থাকা দরকার। একজন পূর্ণবয়স্ক মহিলার শরীরে ভিটামিন ‘এ’ দিনে কম করে ৭০০ মাইক্রোগ্রাম থাকা উচিত। পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের শরীরে দিনে কম করে ৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’ থাকা দরকার। মহিলাদের খাবারে ঊর্ধ্বসীমা দৈনিক সর্বাধিক ৩০০০ মাইক্রোগ্রাম ও পুরুষদেরও ৩০০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ‘এ’ থাকা দরকার।


 ভিটামিন এ একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন যা প্রাকৃতিকভাবে অনেক খাবারেই উপস্থিত থাকে।


ভিটামিন ’এ’ এর কাজ কী?


দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে ভিটামিন এ সাহায্য করে।

আমরা যে খাবার খায় তা হজমে ও ক্ষুধা সৃষ্টিতে কাজ করে।

আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখে।

রক্তে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখে।

ত্বককে সুস্থ রাখে এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করে|


ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে কোন রোগ হয়?


শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব হলে নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে। সর্দি, কাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ নানা প্রকার রোগ হতে পারে। তবে সবচেয়ে বিপদজনক রোগগুলো হলো রাতকানা রোগ ও জেরপথালমিয়া রোগ। দুইটি রোগই কিন্তু চোখের রোগ। আসুন জেনে নিই রাতকানা রোগ কি এবং জেরপথালমিয়া রোগ কি?


রাতকানা রোগ


১. রাতকানা রোগঃ রাতের বেলায় অল্প আলোতে কম দেখা বা দেখতে না পারাকে রাতকানা রোগ বলে। এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় শিশুরা। তাই তাদেরকে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি ও রঙিন ফলমূল খাওয়াতে হবে। টিকা দিবসে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো উচিত। কেননা এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।


২. জেরপথালমিয়াঃ ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে চোখের পানি শুকিয়ে যায় ও চোখের আদ্রতা হারায়।ফলে চোখের কার্নিয়ার উপর শুষ্ক আবরণ পড়ে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সমস্যার কারণে চোখ আলো সহ্য করতে পারে না। চোখে পুঁজ জমা ও চোখের পাতা ফুলার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।


রাতকানা ও জেরপথালমিয়া রোগের সময়মত চিকিৎসা না করালে চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ ধরনের রোগের বৈশিষ্ট দেখা দিলে দ্রুত অভিজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে। নিয়মিত ভিটামিন এ গ্রহণ করলে এসব রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বেশি খেয়াল রাখতে হবে গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ এদের প্রতি যেন তাদের দেহে এর অভাব পড়ে। 



ভিটামিন ‘এ’ ও শিশু



শিশুর পুষ্টির ক্ষেত্রে ভিটামিন ‘এ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শিশুদের শরীরে ভিটামিন ‘এ’ র অভাব থাকলে শিশুর পুষ্টিতে ব্যঘাত ঘটে। পৃথিবীতে এখনও প্রতিবছর ৬০০০০০ শিশু ভিটামিন ‘এ’ র অভাবে অপুষ্টির শিকার। ৯ মাস থেকে ৪ বছরের শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ‘এ’ জনিত রোগ বেশি দেখা যায়। ভিটামিন ‘এ’ র অভাবে ক্যারটম্যালেসিয়া রোগ দেখা দেয়। ভিটামিন ‘এ’ সঠিক মাত্রায় শিশুর শরীরের না থাকলে মেসেলস ও ডায়রিয়া জাতীয় অসুখ দেখা দেয়। ভিটামিন ‘এ’ শিশুর শরীরের থাকলে শিশু সুস্থ্য ও সবল থাকে। সহজে রোগ হয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। চোখের দৃষ্টি ঠিক থাকে। মায়ের বুকের হলুদ দুধ, শাকসবজি, ফলমূল শিশুদের খাওয়ানো উচিত। এছাড়া ভিটামিন ‘এ’ কম থাকলে শিশুকে পামতেল খাওয়ানো যেতে পারে।



কোন খাদ্যে ভিটামিন ’এ’ পাওয়া যায়?


১.উদ্ভিদজাত ২. প্রাণীজাত


উদ্ভিদজাত উৎস হল হলুদ ও সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফলমূল, সাধারণত যে শাকসবজি বা ফলের রঙ যত গাঢ় হয় তাতে ভিটামিন ‘এ’ র পরিমান তত বেশি হয়। এছাড়া গাজর, কুমড়ো, পাকা পেঁপে, ঘি, মাখন ও অন্যান্য সব্জি, ফল ইত্যাদিতে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। প্রাণীজাত উৎস হল মূলত মাংসাশী প্রাণী ( হাঙর, কড, হ্যলিবাট ইত্যাদি মাছের যকৃৎ )। মাছের তেল বা তেলযুক্ত মাছ। মাংস, ডিম ইত্যাদি খাবার থেকে ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়।



মলা মাছ

দেখতে ছোট হলেও এই মলা মাছে প্রচুর ভিটামিন এ পাওয়া যায়

মাছের তেল, ক্যারোটিন সমৃদ্ধ শাকসবজি, বিভিন্ন প্রকার রঙিন ফলমূল ও প্রাণিজ স্নেহে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ’এ’ পাওয়া যায়। এর উৎসগুলো হলোঃ ১. শাকসবজিঃ লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, লাউ, টমেটো, ব্রোকলি গাজর, ফুলকপি, বীট, মিষ্টি আলু ও মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি। ২. মাছঃ মলা ও ঢেলা মাছে ও  কড মাছের যকৃতের তৈল। ৩. ফলমূলঃ পাকা পেঁপে, আম, কাঁঠাল, বেল, আপেল, কলা, তরমুজ ইত্যাদি ফল।



কলিজা

কলিজাতে প্রচুর ভিটামিন এ পাওয়া যায়

এছাড়া প্রাণিজ থেকে বিশেষ করে  দুধ, মাখন, পনির, ডিমের কুসুম, কলিজা বা যকৃৎ এর মধ্যে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।





মানব দেহে ভিটামিন ‘এ’ র প্রয়োজন আছে। তবে তা শরীরের দরকারের মাত্রা অনুযায়ী। শিশু, মহিলা, পুরুষ সকলের শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ র যোগান থাকা উচিত।




Post Navi

Post a Comment

0 Comments